বলয় সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণে সেন্টমার্টিনে ক্যাম্প আয়োজন

সূর্যের বলয় গ্রহণসূর্যের বলয় গ্রহণ
২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি, শুক্রবার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-বান্দরবান-কক্সবাজার অঞ্চল থেকে দেখা যায় সূর্যের বলয় গ্রহণ। ডিসকাশন প্রজেক্ট, উম্মাদ, নালন্দা, নেচার স্টাডি এন্ড কনসারভেশন ইউনিয়ন এবং কসমিক কালচারের সমন্বয়ে গঠিত ‘পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ কমিটি’ উদ্যোগ নিয়েছিল সেন্টমার্টিন-এ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প আয়োজনের। তিনদিন ব্যাপি এই আয়োজনে বিজ্ঞানকর্মী, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিকদের একটি দল ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করে। অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মশালা, পরিবেশ বিষয়ক ডিসকাশন, কার্টুন কর্মশালা, আকাশ পর্যবেক্ষণ, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল অনুষ্ঠান।

আমরা জানি সূর্যগ্রহণকালে চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে। তখন চাঁদ সর্ম্পূণ বা আংশিকভাবে সূর্যকে ঢেকে ফেলে। এই আপেক্ষিক অবস্থান কেবল নতুন চাঁদের (পূর্ণিমা) সময় ঘটে, যখন সূর্য ও চাঁদের মিলন পৃথিবী থেকে দৃষ্টিগোচর হয়। আপাতদৃষ্টিতে পৃথিবী থেকে চাঁদের আয়তন সূর্যের আয়তনের প্রায় অনুরূপ। কারণ, সূর্য চাঁদের চেয়ে ৪০০.৭ গুণ বড় এবং চাঁদের তুলনায় সূর্য ৪০০ গুণ দূরে অবস্থি’ত। তাই পৃথিবী থেকে চাঁদকে যত বড় দেখায়, সূর্যকেও প্রায় ততটা বড় দেখায়। তারা একই সরলরেখায় মিলিত হলে চাঁদ সূর্যকে ঢেকে ফেলে। ফলে পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার এবং সাধারণত সূর্যের অদৃশ্যমান বহিস্থঃ আবহ জ্যোতির্বলয় দৃশ্যমান হয়। সৌরজগতের অন্য কোনো গ্রহ থেকে এই গ্রহণ দেখা সম্ভব নয়।
পৃথিবীর চতুর্দিকে চাঁদের কক্ষপথ সূর্যের চতুর্দিকে পৃথিবীর কক্ষপথের তুলনায় ৫ ডিগ্রি হেলে আছে। তাই সচরাচর পূর্ণ সূর্যগ্রহণ ঘটে না, বেশি ঘটে থাকে আংশিক গ্রহণ। কারণ চাঁদ যখন গড়পরতা দুরত্ব থেকে দূরে সরে যায়, তখন সূর্যকে সর্ম্পূণভাবে ঢেকে ফেলতে পারে না। ফলে আংটি বা বলয়াকারের গ্রহণ দৃশ্যমান হয়, যা বলয়গ্রাস গ্রহণ নামে পরিচিত। বলয় সূর্যগ্রহণের বেলায় চাঁদ সূর্যের কেন্দ্রকে ঢেকে ফেলে কিন্তু সূর্যের কিনারা অনাবৃত থাকে এবং সূর্যের কিনারা ঘেঁষে একটি বলয় দৃশ্যমান হয়। এক্ষেত্রে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরবর্তী অবস্থানে থাকায় প্রচ্ছায়া হ্রস্ব হয়ে থাকে। আংশিক সূর্যগ্রহণ থেকে এক্ষেত্রে এটাই তফাত যে চাঁদ সূর্যের ঠিক সম্মুখভাগে অবস্থান করে এবং ছায়ার কেন্দ্রস্থলে থাকে সূর্য। বলয় গ্রহণের বিস্তার ১ চেয়ে কম থাকে। সাধারণত পূর্ণগ্রহণের তুলনায় বলয়গ্রহণ বেশি দেখা যায়। কারণ গড়পরতা চাঁদ বেশিরভাগ সময়ই পৃথিবী থেকে বহু দূরে অবস্থান করে। সাধারণত গড়ে একশ বছরের মধ্যে শতকরা ২৮ ভাগ পূর্ণগ্রহণ, ৩৩ ভাগ বলয় গ্রহণ এবং বাকি আংশিক গ্রহণ। ১৫ জানুয়ারি, ২০১০ বাংলাদেশ (চট্টগ্রাম) স্থানীয় সময় দুপুর ০১:৪৬ মিনিটে গ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ০৫:০২ মিনিটে শেষ হয়। সর্বোচ্চ গ্রহণ সম্পন্ন হয় ০৩:৩৩ মিনিটে, গ্রহণের সমগ্রতা ছিল ০.৮২৫%।