সাবর্ণ সংগ্রহশালার ত্রয়োদশ আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব

 

পড়ন্ত বেলায় তখন ভিড় জমিয়েছেন বরাহনগরের ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজের প্রিন্সিপাল, অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীরা। নিজের চোখে একবার দেখা বা নোট নেওয়া, মুঘল রাজত্বকালের নানা মুদ্রা, কলকাতার প্রথম ইট, ১৬০৮-এর। এই রকম একটা ছবি ধরা দিল সাবর্ণ সংগ্রহশালার প্রদর্শনীর শেষ দিনে।

পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার দায়বদ্ধতার ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে পরবর্তী প্রজন্ম এক অনাবিল আনন্দের মাধ্যমে। এ আনন্দে তাই শামিল হয়েছেন আট থেকে আশি। শিক্ষা-শিল্প-ইতিহাস নিয়ে সাবর্ণ সংগ্রহশালার প্রদর্শনী শেষ হল এক আনন্দঘন মুহূর্তকে সাক্ষী রেখে। বড়িশার বড়োবাড়ি, ‘সপ্তর্ষি ভবন’-এ শেষ হল চার দিনের অনুষ্ঠান। প্রতি দিন প্রদর্শনী খোলা ছিল সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। নানা অনুষ্ঠানে সাজানো ছিল চার দিন। বড়োবাড়ির দুর্গাদালানে বসেছিল প্রশ্নোত্তরের আসর। পরিচালনায় ছিলেব ক্যুইজ মাস্টর সঞ্জয় রায়চৌধুরী, রাজর্ষি নাগ ও দেবকুমার মিত্র। এলাকার প্রবীণাদের খেলা ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রদর্শনীর মূল ভাবনা ‘ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় রেট্রস্পেকটিভ’
প্রদর্শনীর মূল ভাবনা ‘ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় রেট্রস্পেকটিভ’। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু যে একজন কৌতুক অভিনেতাই ছিলেন না, ছোটো থেকে তাঁর জীবনসংগ্রামের সঙ্গে কী ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম জড়িয়ে গিয়েছিল তা তুলে ধরা হয়েছে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা ও ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা বই রাখা ছিল। হাতঘড়ি, পাঞ্জাবি, কলম, শাল সহ নানা জিনিস প্রদর্শিত হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন ভানুপুত্র ও পুত্রবধূ সৌমিত্র-বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন কর্নেল সৌমিত্র রায়। প্রতি বারের মতো প্রণব রায় দিবস উদযাপিত হয়েছে। সঙ্গে সংযোজন শতবর্ষে সত্য চৌধুরী। প্রথম রেকর্ড ও ব্যবহৃত জিনিস রাখা হয়েছে। মিথ গুহ রায় গানে গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভানুবাবুর লেখা গল্প থেকে শ্রুতিনাটক পরিবেশন করেন সুচরিতা রায় চৌধুরী ও অঞ্জন রায় চৌধুরী। ছিলেন সাবর্ণ সংগ্রহশালা পরিবার পরিষদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডার অভিনেতা অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও জগজ্জননী মাসারদা খ্যাত সুমন কুণ্ডু।

এই প্রদর্শনীতে পাশাপাশি ছিল সাবর্ণ পরিবারে কোনো না কোনো সময়ে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, বিধানচন্দ্র রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রফুল্ল রায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কবিশেখর কালিদাস রায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, সুনির্মল বসু সহ নানা গুণীজনের পাঠানো চিঠি। এখানে দর্শকের কৌতূহলী চোখ ছিল। ১৮৪০-এর মাটির জালাটিও স্থান পেয়েছে যেখানে ২৪০ কেজি চাল রাখা হত।

এ বারের থিম কান্ট্রি ছিল থাইল্যান্ড। জাতীয় পোশাকের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে থাইল্যান্ডের মুদ্রা ও উৎসবের লিপি। প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী সমীর আইচ জানতে চেয়েছিলেন অন্য সময়ে ছাত্ররা আসতে পারবেন কিনা। সংগ্রহশালার কিউরেটর দেবর্ষি রায় চৌধুরী জানান সারা বছর খোলা থাকে। এখানে এলে তা বুঝিয়ে দেওয়ার মতো সদস্য উপস্থিত থাকেন।

সাবর্ণ সংগ্রহশালার ত্রয়োদশ আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবের প্রদর্শনী
সংগ্রহশালার এ বার নতুন সংযোজন ছিল ৬ বালিগঞ্জ প্লেসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি ফুড ফেস্টিভ্যাল। ওই খাদ্য উৎসবে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের কিছু গোপন রান্নার পদ উপস্থাপন করা হয়। যেহেতু এ বছর প্রদর্শনীর বয়স ১৩, তাই ১৩টি পদ রাখা হয়। প্রতি বছরই কলকাতার বড়িশার ‘বড়বাড়ি’তে নিয়মিতভাবে ইতিহাস উৎসবের আয়োজন করে থাকে সাবর্ণ পরিবার, যা ইতিমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাঙালীদের কাছে। এবছরের এই আয়োজনেও ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য হাজির করেছে অগোচরে থাকা নানা নিদর্শন ও ঐতিহ্য।